গরমে শরীরের জন্য বেলের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা কি
গরমে শরীরের জন্য বেলের উপকারিতা তো বলে শেষ করা যাবে না। আমরা জানি দেয়াল একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। বেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যারোটিন, শ্বেতসার, লৌহ এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে সব সময় পাওয়া যায়। বেল গাছের ফুল থেকে শুরু করে পাতাসহ প্রায় সবগুলো অংশই ঔষধি গুণের গুণে সমৃদ্ধ। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বেল পছন্দ করেনা এমনকি বেল ছুঁয়েও দেখিনি। আমরা সবাই জানি, পাকা বেল খাওয়া শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। এমনকি এটাও আমরা বলি যে খাবেন নাকি আমাদের পেট পরিষ্কার রাখে। যার কারণে আমরা খাওয়ার সময় বা বেল কেনার সময় আমরা পাকা বেল খুঁজি।
বেলের উপকারিতা |
পাকা বেল হজম করতে আমাদের শরীরের অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এমনকি পাকা বেল প্রতিদিন নিয়মিত খেলে অস্ত্র ছিদ্র হয়। আর কাঁচা বেলের উপকারিতা বলার বাইরে। পাকা পেলে চেয়ে কাঁচা বেলের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। কাঁচা বেল প্রতিদিন নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের অস্ত্র ছিদ্র হতে দেয় না। যদি কোন ধরনের ছিদ্র থেকে থাকে তাহলে সেই ছিদ্র বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই সবাই কাঁচা বেল পুড়িয়ে বা শুকিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি পাবেন।
বেলের পুষ্টি উপাদান সমূহ
আমরা জানি বেলের উপকারিতা অপরিসীম। আর এই অপরিসীম তার কারণ কি কি রয়েছে তা আমরা এখন জানব-
অন্যান্য ফলের চেয়ে ডালের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বেল দুইভাবে খাওয়া যায় পাকা এবং কাঁচা। বেলে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম এর মত বিশেষ উপাদান প্রচুর পরিমাণে। 100 গ্রাম এর মধ্যে রয়েছে 1.8 থেকে 2.62 গ্রাম প্রোটিন, 28.11 থেকে 31.8 গ্রাম শর্করা, 0.2 থেকে 0.39 গ্রাম স্নেহ, 54.96 থেকে 61.5 গ্রাম পানি, 0.13 মিলিগ্রাম থায়ামিন, 55 মিলিগ্রাম ক্যারোটিন, 8 থেকে 60 মিলিগ্রাম এসকরবিক এসিড, 1.19 মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন, 2.11 মিলিগ্রাম টারটারিক এসিড এবং 1.1 মিলিগ্রাম নিয়াসিন। এতগুলো উপাদানের মধ্যে থাকার পরেও আমাদের মধ্যে অনেকেই পছন্দ করে না। আপনারা এখন হয়তো বুঝতে পারছেন যে আমাদের জন্য কতটুকু উপকারিতা পালন করে।
বেলের উপকারিতা
সম্পর্কে আমরা এতক্ষণে অনেক কিছু জেনেছি চলুন এবার জেনে নেয়া যাক বেলের কয়েকটি বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে। যে উপকারিতা গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সব সময় উপকারী হিসেবে থাকবে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক বেলের উপকারিতা-
কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে বেলের উপকারিতাঃ
আমরা হয়তো জানি যে প্রাচীনকাল থেকে বেলের ব্যবহার হয় পেট পরিষ্কার করার জন্য। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে সে এ কথাটি সত্য। কোন বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের পেটের মল পরিষ্কার করতে বেল আমাদের সাহায্য করে। নিয়মিত টানা তিন মাস জেল দিয়ে শরবত বানিয়ে অথবা বেলের শরবত বানিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে আমরা উপকারিতা পেতে পারি বেলের মাধ্যমে। কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগ আর থাকবেনা যদি আপনি পাকা বেলের সাথে চিনি ও দুধ মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খান।
ডায়াবেটিস কমাতে বেলের উপকারিতাঃ
পাকা বেলের মধ্যে রয়েছে মিথানল যা ব্লাড সুগার কমাতে বিশেষ অবদান রাখে। গবেষণায় জানা গেছে ডায়াবেটিসের জন্য ভালোভাবে বেলের ফলাফল পেতে শরবত বানিয়ে ফেলি হবে না এমনিতেও বেল খেতে হবে। এভাবে হবার ফলে বেলের সর্বোচ্চ উপকারিতা পাবেন ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার জন্য।
ক্যান্সার থেকে বাঁচার জন্য বেলের উপকারিতাঃ
আজকের দিনে ক্যান্সার একটি অনেক বড় ধরনের রোগ মহামারী হিসেবে বলা যেতে পারে। আমরা সবাই হয়তো চাই এই রোগটি যেন আমাদের না হয় তার থেকে যেন আমরা বেঁচে যেতে পারি। সত্যি যদি আপনি এই রোগ থেকে বাঁচতে চান তাহলে নিয়মিত বেল খান। বেলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি মুটাজেন ও এদের মতো বিশেষ কার্যকরী উপাদান। বেলের মধ্যে এই উপাদান থাকার কারণে আমাদের শরীরে টিউমার বাসা বাঁধতে পারেনা। আর যেহেতু এরমধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এই উপাদানটি রয়েছে তাই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। বেলের উপকারিতা আমাদের ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করে।
যক্ষা কমানোর জন্য বেলের উপকারিতাঃ
আপনি হয়তো চমকে উঠতে পারেন যে পাকা বেলের মধ্যে আছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল এর উপাদান। এই উপাদানটি সব সময় যক্ষা কমাতে আমাদের শরীরে বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে এর জন্য সবচেয়ে ভালো ফল পেতে ব্রাউন সুগার এর সঙ্গে অথবা মধু দিয়ে শরবত করে রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়ার পর শুয়ে পড়তে হবে। এই শরবত টানা 50 থেকে 60 দিন খাওয়ার ফলে আপনি শতভাগ উপকারিতা পেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার কমাতে উপকারিতাঃ
আমাদের মধ্যে অনেকেরই আছে যারা দীর্ঘদিন ধরে আলসার বা গ্যাস্ট্রিক এর বেতাই ভুগতেছেন। বুঝতে পারবেন বেল কতটা উপকারী এবং কতটা কার্যকরী। আপনাদের হয়তো অনেকেই দীর্ঘদিন যাবৎ ডাক্তার দেখাচ্ছেন কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছেনা। পাকা বেলের মধ্যে যে ফাইবার আছে যা আলসার বা গ্যাস্ট্রিক কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। এছাড়া পাতা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন পানি খেলে আলসার বা গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। আপনারা বেলের এই উপকারিতাটি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন।
ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় বেলের উপকারিতাঃ
বেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে খাদ্যআঁশ যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী বিশেষ করে ত্বকের জন্য। নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে এছাড়া আমাদের দেহের মধ্যে বিভিন্ন কালো দাগ এবং ব্রণও দূর করে। আমাদের মধ্যে যাদের ত্বকের সমস্যা আছে তারা বেলের এই উপকারিতা দেখতে পারেন।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় বেলঃ
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও রয়েছে বেলের বিশেষ উপকারিতা। বেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যে উপাদানটি আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং চোখের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভাবে কাজ করে। শুধু তাই নয় চোখের বিভিন্ন ধরনের রোগ কমাতে সাহায্য করে যেমন গ্লুকোমা ও জেরসিস ইত্যাদি রোগ হতে আমাদেরকে রক্ষা করে। বেলের পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করার ফলে চোখের ছানি কমে যেতে পারে। আমাদের মধ্যে যারা নিয়মিত মধু খায় তারা অন্তত চোখের বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পায় এবং তুলনামূলক ভাবে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
আমাশয় থেকে বাঁচার জন্য বেলের উপকারিতাঃ
আমাশা একটি অতি যন্ত্রণাদায়ক রোগ। এই রোগটি হলে নাভির কাছে ব্যথা করে এবং বমি বমি ভাব হয় এক কথায় সব মিলিয়ে অনেক খারাপ একটি অবস্থা হয়ে পড়ে। কিন্তু বেলের মধ্যে এইরূপে কমানোর সক্ষমতা অনেকাংশে আছে। কাঁচা বেল টুকরো টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে রাতে রাখার পর সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই পানিটুকু পান করুন। এরকম নিয়মিত করতে থাকলে আমার স্যারের মতো রোগ খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে এবং বেলের উপকারিতা পাওয়া যাবে।
শরীরের শক্তি বা এনার্জি বাড়াতে বেলের উপকারিতাঃ
আজকের দিনে প্রায় সকল মানুষেরই সারাদিন কাজ করতে হয়। আর সেই কাজের ক্ষমতার জন্য আমাদের শরীরে শক্তি বা এনার্জির প্রয়োজন। সে এনার্জি বাড়ানোর জন্য আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফলমূল এবং ভালো ভালো খাবার খেয়ে থাকি। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ফল সে যেমন আমরা শরীরের শক্তি বাড়ায় তেমনি বেল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চয় হয়। 100 গ্রাম প্রায় 140 গ্রাম ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। আর বেল এর মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ একটু বেশি থাকার কারণে আমাদের বেশি তাড়াতাড়ি কাজ করতে সক্ষম হয়। যার কারণে আমরা টানা সময় কাজ করতে পারি। তাহলে বুঝতেই পারতেছেন যে আমাদের শরীরের শক্তি বা এনার্জি বাড়ানোর জন্য বেলের উপকারিতা কতটুকু।
ম্যালেরিয়া কমাতে বেলের উপকারিতাঃ
আপনারা হয়তো অনেকেই নাও শুনে থাকতে পারেন যে ম্যালেরিয়া কমাতে বেলের উপকারিতা রয়েছে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন এখন যে ম্যালেরিয়া কমাতে বেলের একটি পুষ্টি গুণ রয়েছে। ম্যালেরিয়া হলে আপনারা কাঁচা বেলের কিছু টুকরো গুড়া করে নেবেন। তার সাথে তুলসির রস এবং মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার খান। আপনারা অল্প সময়ের মধ্যেই দেখতে পারবেন যে একটি অসাধারণভাবে কাজ করতেছে। আপনারা ম্যালেরিয়া কমানোর কাজে বেলের ব্যবহার করতে পারেন নিঃসন্দেহে।
রক্ত পরিষ্কার করতে বেলের উপকারিতাঃ
মানব শরীরের সবচেয়ে প্রধান উপাদান হলো রক্ত। রক্ত ছাড়া বাঁচা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদের দেহের যত ধরনের কার্যক্রম ঘটে তার মূল হল রক্ত। এ রাতের মাধ্যমে আমাদের হৃদপিণ্ড চলে তাহলে বুঝতেই পারতেছেন যে আমাদের রক্ত কতটা দরকার। তার মধ্যে আবার বিশুদ্ধ রক্ত ছাড়া দূষিত রক্ত যদি আমাদের শরীরের মধ্যে থাকে তাহলে মানুষের বাঁচার আয়ু কমে যায়। আমরা অনেকে হয়তো রক্ত পরিবর্তন করতে পারি চাঁদের টাকার পরিমাণ বেশি আছে কিন্তু আমরা অনেকে আছে যাদের রক্ত কেনার মত সামর্থ্য নেই। তাই আমরা এই বেল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের রক্ত বিশুদ্ধ করতে পারি। পাকা বেলের রস বের করার পরে তার সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে আমাদের রক্ত বিশুদ্ধ হয়। এমনকি কিডনি ও লিভারের কাজ বিশুদ্ধ রক্ত আমাদের শরীরে ব্যবহৃত হয়। এখন হয়তো আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন যে বেলের উপকারিতা আমাদের রক্তের জন্য কতটুকু উপকারী হতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ